Krishak Bandhu Prakalpa: ছোটবেলা পড়াশোনার সময় আমরা সাধারণ জ্ঞানের অনেক বই থেকে বেশকিছু সম্প্রদায়ের মানুষকে সমাজ বন্ধু হিসেবে জেনেছিলাম। সমাজ বন্ধুদের সেই তালিকায় সবার আগে যে সম্প্রদায়ের ছিল তারা হল মূলত কৃষক সম্প্রদায় এর মানুষ। কৃষকরা হল আমাদের এই পরিবর্তনশীল সমাজের ভিত্তি এবং ভবিষ্যত। তাদের কাঁধে ভর করেই সমগ্র সমাজের প্রাথমিক প্রয়োজন আহার টুকু মেটে। আমাদের অন্নদাতা এই কৃষক সম্প্রদায় এরাই কৃষক বন্ধু।
আমাদের আজকের বিষয় “বাংলার কৃষক সম্প্রদায়ের জন্য সরকার কী ভাবছে।”
আপনি যদি বাংলার কৃষক হন এবং কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় থাকতে চান তাহলে আপনাদেরকে আমাদের এই নিবন্ধটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। পশ্চিমবঙ্গের সকল কৃষক পরিবারের বাসিন্দাদের জন্য প্রয়োজনীয় এই নিবন্ধটি বাংলায় লিখছি।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার কৃষকদের জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প শুরু করেছে- যার নাম কৃষকদের নাম অনুসারে রাখা হয়েছে কৃষক বন্ধু প্রকল্প (Krishak Bandhu Prakalpa / Scheme)।
কী এই প্রকল্প? (What is Krishak Bandhu Prakalpa?)
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় জনগণের হিতকারী বিভিন্ন প্রকল্প চালু হয়েছে এই রাজ্যে।
এর মধ্যে অন্যতম হল কৃষকদের জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প । যার নাম কৃষক বন্ধু প্রকল্প । পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৮ সালে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ কৃষক বন্ধু স্কিমের / প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন।
১লা ফেব্রুয়ারি ২০১৯ থেকে এই প্রকল্পের আওতায় থাকা সকল কৃষকদের আর্থিক অনুদান দেওয়া চালু হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী এই প্রকল্পটি পুনরায় নতুন অবয়বে চালু করার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৭ ই জুন ২০২১ সালে মুখ্যমন্ত্রী নতুন কৃষক বন্ধু প্রকল্পটি ঘোষণা করেন। যার অধীনে কৃষকদের প্রদেয় আর্থিক সহায়তা দ্বিগুণ করা হয়েছে।
আগে কৃষকরা এক একর বা তার বেশি জমির জন্য প্রতি বছর ৫০০০ টাকা পেতেন। এখন কৃষকরা তার সুবিধা দ্বিগুণ করে বছরে ১০০০০ টাকা পাবে। পশ্চিমবঙ্গ কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সুবিধা দ্বিগুণ করে দেওয়া ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহারের একটি অংশ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৬৮ লক্ষ কৃষক উপকৃত হয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের উন্নয়নকল্পে এবং তাদের কল্যাণার্থে এই প্রকল্পটি শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। অনেক সময় দেখা যায় বাংলার কৃষক বন্ধুরা চাষ করার সময় তাদের হাতে প্রয়োজনীয় সেই পরিমাণ অর্থ মজুত থাকে না । এ সমস্ত কৃষকদের আয় সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এবং গরীব চাষিদের জন্য আর্থিক সাহায্য করার লক্ষ্য মাথায় নিয়েই পশ্চিমবঙ্গ সরকার চালু করেছে এই প্রকল্পটি।
যে সমস্ত গরিব চাষীরা পয়সার অভাবে ঠিক ভাবে চাষ করতে পারেন না তাদের প্রত্যেক বছর দুই কিস্তিতে পাঁচ হাজার করে ১০০০০ টাকা করে দুইবার দেওয়া হয়ে থাকে। শুধু তাই নয় গরীব চাষীদের বীমা স্বরূপ কোন কৃষকের মৃত্যু হলে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়ে থাকে এই প্রকল্পের অধীনে।
কৃষক বন্ধু (Krishak Bandhu) প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যগুলি হল
ক) চাষ শুরুর আগে কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকে। কৃষি উপকরণ কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা । যাতে তারা সুস্থির ভাবে চাষের কাজ শুরু করতে পারে।
খ) অসময়ে কৃষকের মৃত্যুতে তাঁর পরিবারকে আর্থিক সুরক্ষা প্রদান।
গ) গরীব চাষীদের পাশে দাঁড়ানো।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পের দুটি অংশ
- কৃষক বন্ধু (সুনিশ্চিত আয়) প্রকল্প – Krishak Bandhu (Assured Income) scheme
- কৃষক বন্ধু (মৃত্যুজনিত সহায়তা) প্রকল্প – Krishak Bandhu (Death Benefit) scheme.
এই কৃষক বন্ধু প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত টাকা কৃষকরা দুই বার দুটো কিস্তিতে পেয়ে থাকেন যথাক্রমে
১)রবি মরশুম ও ২)খরিফ মরশুমে।
আসুন তাহলে আমরা এই কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সুবিধা সংক্রান্ত তথ্য গুলো জেনে নেই এবং তার সঙ্গে জেনে নেওয়া যাক এই প্রকল্পের আওতায় থাকতে হলে আপনাদেরকে কৃষক বন্ধু প্রকল্পে আবেদন করার জন্য কি কি শর্ত মানতে হবে (Krishak Bandhu Prakalpa Eligibility), কি কি নথি জমা করতে হবে (Required Documents For Krishak Bandhu Scheme Application) এবং কৃষক বন্ধু স্ট্যাটাস চেক (Krishak Bandhu Status Check) কিভাবে করতে হবে।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পে আবেদন করার জন্য কি কি শর্ত মানতে হবে
- আপনার নামে একটি জমির দলিল বা পর্চা থাকলে অথবা নিবন্ধীকরণের নথি বা পাট্টা বা বনবিভাগের পাট্টা থাকলে আপনি এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারবেন।
- এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে আপনার ভোটার কার্ড এবং আধার কার্ড থাকা আবশ্যিক।
- আপনার নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার এবং আপনার আধার কার্ড লিংক থাকতে হবে সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ( Bank Account Aadhaar Link )-এর সাথে।
- আপনার সক্রিয় একটি মোবাইল নাম্বার অবশ্যই থাকতে হবে, ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের গতি সম্পর্কিত আপডেটের জন্য মোবাইল নাম্বারটি ব্যবহার করা হবে।
- আপনার সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট মাপের ছবি থাকতে হবে।
- যদি আপনি নিজের নামে কোনও জমি না দেখাতে পারেন, তবে স্বঘোষণাপত্র বা দানপত্র বা অন্যান্য নথি সঙ্গে প্রস্তুত করুন এবং পঞ্চায়েত প্রধানের দেওয়া ওয়ারিশন সার্টিফিকেট সহ আবেদন করতে পারবেন।
এরপর কৃষকের দরখাস্ত গৃহীত হলে “কৃষক বন্ধু” আপের মাধ্যমে সমগ্র বিষয় যাচাই করা হবে। তাঁকে প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ বা Acknowledgement Slip দেওয়া হবে।
কৃষক বন্ধু স্ট্যাটাস চেক (Krishak Bandhu Status Check) কিভাবে করতে হবে।
প্রথমে, অফিসিয়াল ওয়েবসাইট – krishakbandhu.net এ আপনার মোবাইল অথবা কম্পিউটার ব্রাউজারে যান।
তারপর, “নথিভুক্ত কৃষকের তথ্য” এই অপশনে ক্লিক করুন। অথবা এখানে ক্লিক করুন।
এরপর, একটি নতুন উইন্ডো খুলুন এবং আপনার ভোটার আইডি কার্ডটি বক্সে লিখুন (Enter your voter id Card number)।
তারপর, “I am not Robot” এ ক্লিক করুন এবং সার্চ বোতামে ক্লিক করুন।
এখন আপনি আপনার কৃষক বন্ধু স্ট্যাটাস (Krishak Bandhu Status), কৃষক বন্ধু আইডি নম্বর (Krishak Bandhu id No.), এবং পেমেন্ট ইতিহাস (Payment History) দেখতে পারবেন।
এছাড়াও
টাকা ঢুকেছে কি না তা জানতে আপনি আপনার ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টও দেখতে পারেন। তাহলে আপনি বুঝে যাবেন যে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের চাষের টাকা এবছর ঢুকলো কি না। আপনার পদত্ত মোবাইল নাম্বার এ ম্যাসেজ দেওয়া হয়ে থাকে।
নতুন কৃষক বন্ধু প্রকল্পে আবেদন পদ্ধতি (New Krishak Bandhu Prakalpa Form Fill Up) (Download PDF)
- প্রথমে আপনাকে কৃষক বন্ধু নতুন প্রকল্প ফর্ম টি নিচে দেওয়া লিংক থেকে ডাউনলোড করে অথবা নিকটবর্তী ব্লক অফিসে কিংবা দুয়ারে সরকার ক্যাম্প থেকে ফর্ম সংগ্রহ করে যত্ন সহকারে ফিলাপ করতে হবে।
- এরপর আগে যে সমস্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর কথা বলা হয়েছে সেগুলি ওই ফর্মের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।
- ডকুমেন্টস সহ ফর্ম টি নিকটবর্তী ব্লক অফিসে কিংবা দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে জমা করতে পারবেন।
Krishak Bandhu New Prakalpa Form Download Link
- Download Pdf From [English Version] – Click Here
- Download Pdf From [বাংলা ভার্সন] – Click Here
- Visit Krishak Bandhu Official Website – Click Here
কৃষক বন্ধু Helpline নম্বর
- সরাসরি যোগাযোগ করুন – 8597974989 এবং 6291720406 নম্বরে।
- ফোন করার সময় : 10am – 6pm
- ইমেইল আইডি – [email protected]